রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে এসেছিলেন। কোথায় জানেন? মুসকান জুবেরীর রেস্টুরেন্টে। কিন্তু খেতে যাওয়ার পর কী হল? সে গল্পই হবে আজ!
রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে এসেছিলেন
মুসকান জুবেরীর রান্নার হাতের খবর ছড়িয়ে পড়েছে সব জায়গায়। রেস্টুরেন্টের নাম, “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি”। এই নাম এবং মুসকানের রান্না এই দুইটা বিষয় এই রেস্টুরেন্টের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে সব চেয়ে কাজে দিয়েছে। অনেকের সুযোগ না হয়ে উঠলেও এই রেস্টুরেন্টের স্বাদের গল্প অনেকের জানা।
যার নামের দৌরাত্মে রেস্টুরেন্টের রেটিং এত বেড়ে গেছে, স্বয়ং রবী গুরুর কাছে এই সংবাদ পৌছাতে আর দেরি হলো না। তাই রবী গুরু সিন্ধান্ত নিলেন, তিনি ঐখানে খেতে যাবেন। কিন্তু গুরুর মনে একটু মুসকানের জন্য মায়া হচ্ছিল এই ভেবে, যদি এখানে তিনি নিজে খেতে যান, তাহলে মুসকানের রেস্টুরেন্টের নাম টা আর রাখা যাবে না।
তিনি অনেক ভাবলেন এবং অবশেষে মুসকানের হাতের রান্না খাওয়ার লোভ থেকে নিজেকে আর বিরত রাখতে পারলেন না।
কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে গেলে তো হইছই পড়ে যাবে, তাই রবী গুরু সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি ছদ্মবেশ নিবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। একটা সাহেবী ক্যাপ আর পুরো একটা সানগ্লাস কে সঙ্গী বানালেন তার সফর সঙ্গী হিসেবে।
শান্তিনিকেতন থেকে যাত্রা শুরু করলেন মুসকানের রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে ছদ্মবেশে। রেস্টুরেন্টে রবী গুরুকে কেউ চিনতেই পারলো না। তখন রবী গুরু নিজের এই অসাধারণ ছদ্মবেশ ধারণ করার কারণে নিজেকে ধন্যবাদ দিলেন মনে মনে।
এরপর অর্ডার দিলেন, মুসকানের স্পেশাল মাটন কারি। খেয়ে তো রবীন্দ্রনাথ পুরো মুগ্ধ। আসলেই রান্নাতে মুসকানের হাতে কিছু একটা আছে। তারপর পকেট নোট বুক থেকে বের করলেন প্রিয় নোটবুক খানা এবং লিখতে শুরু করলেন,
“দিবস রজনী, আমি যেন কার, আশায় আশায় থাকি,
দিনশেষে আমি মুসকানের হাতের রান্নার কাছে যেন ফিরে আসি”
এই দুই লাইন লিখে রবী গুরু কাগজ টি ম্যানেজারের কাছে দিয়ে এটাকে মুসকানের হাতে দিতে বললেন। ম্যানেজার মুসকানের কাছে কাগজ টি পৌছিয়ে দিলেন।
রবী গুরু খাওয়া শেষ করে, রেস্টুরেন্টের অপর দিকে থাকা আব্দুর রহমান মিয়ার পানের দোকানে পান চিবুচ্ছেন। তখন হঠাৎ এক ছোকরা দৌড়াতে দৌড়াতে আসলেন এবং রবীন্দ্রনাথকে বললেন, “মুসকান ম্যাডাম আপনার সাথে দেখা করতে চায়”।
রবীন্দ্রনাথ যার খাবার খেয়ে মুগ্ধ, স্বয়ং সেই নারীর সাথে দেখা হবে রবীর গুরুর দেখা হবে এটা ভেবেই রবীর গুরু ভাল লাগা শুরু করলো।
অবশ্য রবীন্দ্রনাথ যদি তাঁর আসল পরিচয় দিতেন, তাহলে ব্যাপার অন্য রকম হয়ে যেত। হয়তো মুসকান তার বাড়িতে নিয়েই আপ্যায়ন করতেন। কিন্তু রবী গুরু সেটা চাননি।
অবশেষে সেই সাহেবী ক্যাপ পরা ও কালো সানগ্লাস ওয়ালা লোক মুসকানের সাথে দেখা করতে গেলেন। মুসকানকে দেখে তো গুরু হতবাক, এই সুশ্রী নারীর দেখা আগে পেলে একখানা উপন্যাস বা কবিতা লিখে ফেলতেন এতদিন। কিন্তু সেই সুযোগ তো আর এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ভাবলেন, মুসকান কে নিয়ে একখানা কবিতা ই লিখবেন।
মুসকান আর রবীন্দ্রনাথ সামনা সামনি বসা। মুসকানও কল্পনা করতে পারেন নি, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তার সামনে বসে আছে। মুসকান রবী গুরুকে কফি খাবে কি-না জিজ্ঞাসা করলেন। রবী গুরু মাথা নেড়ে হ্যা উত্তর দিলেন। রবী গুরুর মুখে তখন কোন ভাষা নেই, তিনি শুধু মুসকান কেই দেখছেন আর মনে মনে কবিতা লিখছেন। মুসকানের পিছনের গল্প রবীন্দ্রনাথ জানেন না। তাই অকপটে কফির কাপে চুমুক দিয়ে কফি খাওয়া শুরু করলেন। কফিতেও সেই একটা স্পেশাল স্বাদ। মুসকান মানেই স্পেশাল কিছু।
অনেক দিন এমন নর মুসকানের সামনে বসে থাকেনি। তাই নরখাদকের সেই পুরনো নেশা মুসকানের মস্তিষ্কে আবার সাড়া দিলো। তিনি কফির সাথে একটু ঘুমের ওষুধ মি শি য়ে দিলেন। রবীকে একবারে মারতে মুসকানের ইচ্ছে হল না, তাই প্রথমে মুসকান তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন। এরপর কফি খেতে খেতে রবী গুরু গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন।
এরপর একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে রবী মৃত্যু নিশ্চিত করলো মুসকান। তারপর যখন মুসকান চোখ থেকে সানগ্লাস আর মাথা থেকে ক্যাপ খুললেন, তখন তো মুসকান হতবাক। এ কি করে ফেলেছেন তিনি, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে এসেছিলেন, অতচ তিনিই রবীন্দ্রনাথকে খেয়ে দিলেন। পরে রবীন্দ্রনাথকে আরও স্পেশাল রেসিপি তৈরি করেছিলেন মুসকান জুবেরী।
হঠাৎ আব্দুর রহমান মিয়া ডাকা শুরু করলেন, এই আতর আলী এখানে শুয়ে আছো কেন? সকালের আলো ফুটছে, ওঠো। আতর আলী চোখ মুছে তাকালেন এবং বললেন ” আসলেই কি রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে এসেছিলেন, এতক্ষণ কি স্বপ্ন দেখছিলাম, ?”
আরও পড়ুন